Wednesday, April 26, 2023

দুই চাকায় জীবন-জীবিকা


মোঃ মাহমুদুল হাসান: নওগা জেলার বাসিন্দা তৈয়ব আলী (৬০)। ১০ বছর ধরে মুক্তাগাছার মনিরামবাড়ীতে একটি ভাড়া বাসা নিয়ে থাকেন। শখের বশে নয় বরং জীবিকার তাগিদে তৈয়ব আলীর এ শহরে আসা। ছয় ছেলে-মেয়ের সংসারে অভাব-অনটনে কাটতো তার দিন। কোন জমা-জমি ও এলাকায় কাজ না থাকায় বাই সাইকেল নিয়ে আর সামান্য লোনের টাকা দিয়ে এ ব্যবসায় নামেন তিনি।

সময় সকাল ৭টা। বাই সাইকেল নিয়ে ময়মনসিংহ-টাঙাইল মহাসড়ক ধরে ছুটছেন তৈয়ব আলী। দুই হাতে সাইকেলের শক্ত করে হ্যান্ডেল ধরে প্যাডেলে পা মেরে এগিয়ে চলছেন ধীরে ধীরে। সাইকেলের চাকার অংশটুকুই শুধু দেখা যায়। দূর থেকে দেখে সাইকেল বুঝার উপায় নেই। দূর থেকে দেখলে মনে হয় একটা চলন্ত দোকান। সাইকেলের প্রায় পুরো অংশ জুড়েই হাড়ি-পাতিল, গামলা, ছোটখাটো কসমেটিকস্, ছোটদের খেলনাসহ গৃহস্থলির টুকটাক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। বাই সাইকেলে এমন হরেক রকমের জিনিস সাজিয়ে এ গ্রাম থেকে ও গ্রামে বাড়ি-বাড়ি ঘুরে বিক্রি করাই তার পেশা।

তৈয়ব আলীর মতো বিভিন্ন জেলা থেকে আরো প্রায় ১৩০জন সাইকেল ফেরিওয়ালা আছেন এ শহরে। তাদের প্রত্যেকেই মুক্তাগাছা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে ঘরে সাইকেলে ফেরি করে বেড়ান। গ্রামের মানুষ তাদের সাইকেল ফেরিওয়ালা বলেই চিনেন।

নিত্য প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র, শিশুদের খেলনা সাইকেলে বিশেষভাবে সাজিয়ে সকাল বেলা বের হন তারা। আর ফেরেন সন্ধ্যাবেলা। তাতে গড়ে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা লাভ থাকে।

তৈয়ব আলী বলেন, এলাকায় কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়েন। অভাবের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। পরে একটি এনজিও থেকে সামান্য কিছু টাকা লোন কওে এ ব্যবসায় নামেন। এখানে তারা প্রায় ১৩০ জন ফেরিওয়ালা থাকেন। সারাদিন ফেরি করে যা লাভ হয় তা দিয়ে নিজের মেস খরচের পাশাপাশি পারিবারিক খরচও মেটান। তবে বর্তমান করোনাকালীন সময়ে তাদের ব্যবসা তেমন ভালো চলছে না বলেও জানান তিনি।

উপজেলার দুল্লার ছালড়া গ্রামের গৃহবধূ সালমা আক্তার বলেন, এই সাইকেল ফেরিওয়ালারা প্রায় প্রতিদিনই গৃহস্থলির বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনা ইত্যাদি তাদের সাইকেলে সাজিয়ে নিয়ে আসেন। বাহির বাড়িতে এসে হাঁকডাক দেন। আমরাও এসব দোকান থেকে সস্তা দামে জিনিসপত্র কিনে থাকি।

বাড়ি থেকে এতো দূরে এসে ব্যবসা করতে কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার এ ১০ বছরের ব্যবসায় মুক্তাগাছায় এখন পর্যন্ত তেমন কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি। এখানকার লোকজন খুব ভালো বলেও বলেন তিনি। 


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: