রিপন সারওয়ার,: ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ গুদামের চাবি নিয়ে ১৩ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। গত ১০ অক্টোবর তার বদলির আদেশ হয়। নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসে দায়িত্ব বুঝে পাচ্ছেন না। গাঁ ঢাকা দেওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন গুদামে মজুদ ঘাটতি রয়েছে। এর আগেও দায়িত্ব পালন কালে তার বিরুদ্ধে নিয়মিত অফিস না করাসহ অনেক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। চাবি নিয়ে উদাও হওয়ার কারনে তার বিরুদ্ধে গৌরিপুর খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের নেতৃতে একটি ৫ সদস্যর তদন্ত কমিটির গঠন করা হয়েছে।
২০২১ সালের ৯ মার্চ থেকে জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন শাকিল আহমেদ। যোগদানের পর থেকে নিয়মিত অফিস না করা, নিজেকে একজন মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার, পঁচা চাল মজুদ, বরাদ্দ সংগ্রহের নামে অর্থ নেয়ার অভিযোগসহ নানা অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী ধান-চাল ব্যাবসায়ীদের সাথে যোগসাজসে লাগামহীন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
গত ১০ অক্টোবর তার বদলির আদেশ হয়। তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় সাইফুল ইসলামকে। ১১ অক্টোবর সাইফুল ইসলাম মুক্তাগাছা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে যোগদান করলেও এখন পর্যন্ত দায়িত্ব বুঝে নিতে পারেননি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা শাকিল আহমেদের সাথে সরাসরি কিংবা মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এর আগেও তাকে একবার বদলী করা হলে তিনি অফিস তালাবদ্ধ করে বেশ কয়েকদিন গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন। জানাযায় তখন তিনি তদবীরের জন্য ঢাকায় ছিলেন। তখন স্থানীয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে তিনি নিজেকে কৃষি মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন বলে জানা যায়। এদিকে তিনি মুক্তাগাছায় বদলী হয়ে আসার পর থেকে দীর্ঘদিন তিনি তার বেতন-ভাতা উত্তোলন করেননি। গত মাসে তিনি দুই বছরের অধিক সময়ের বেতন-ভাতা একবারে উত্তোলন করেন বলে জানা গেছে।
এদিকে খাদ্যগুদামে কাগজে-পত্রে গুদামটিতে ৩ হাজার ৩৭৯ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা ৩০০ থেকে ৪০০ মেট্রিক টন চাল মজুদ ঘাটতি থাকতে পারে। যার কারণে শাকিল আহমেদ গা ঢাকা দিয়েছেন।
সোমবার দুপুরে মুক্তাগাছা উপজেলা খাদ্য গুদামে গিয়ে পাঁচ সদস্য তদন্ত কমিটির একজন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যলয়ে কর্মরত উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরি) নুসরাত বিনতে আনিছের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সার্বিক বিষয় নিয়ে আমরা তদন্ত করছি। গুদামে সংরক্ষিত খাদ্যদ্রব্যের ঘাটতি রয়েছে কি না তা জানতে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতে গুদামের তালা ভাঙা হবে। সদ্য বিদায়ী খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা শাকিলের সাথে আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, বদলির সাত কার্যদিবসের মধ্যে শাকিল আহমেদ দায়িত্ব বুঝে না দেওয়ায় মনে হচ্ছে মজুদ ঘাটতি রয়েছে। তাই আমরা গত রোববার পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। আমরা দেখব গুদামে মজুদ চালের মান, মজুদ এবং অন্যান্য সার্বিক বিষয়গুলো। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে সদ্য বিদায়ী উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ এর সাথে তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করে কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
0 coment rios: