মো: মাহমুদুল হাসান: চাচাতো ভাইয়ের বিয়ের পাত্রী দেখার কথা বলে এনে পরিকল্পিতভাবে জিম্মী করে মুক্তিপণ দাবী। মুক্তিপণের টাকা না দেয়ায় গণধর্ষণের শিকার হয়েছে এক নারী। ঘটনাটি ঘটেছে গত ২২ জুন ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার শেষ প্রান্তে মধুপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী মধুপুর বনের ইয়াদ আলীর চালা নামক স্থানে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে জানাযায় জামালপুর সদর উপজেলার কডারবাড়ী এলাকার মৃত আ: ছামাদের পুত্র আব্দুর রহিম। সে একটি সংঘবদ্ধ ডলার প্রতারক চক্রের সাথে দীর্ঘদিন যাবত জড়িত। সে তার পরশী চাচাতো বোন স্বামী পরিত্যক্তা (৩৮) কে অতিকৌশলে তার বিয়ের পাত্রী দেখার কথা বলে গত ২২/৬/২৩ তারিখ বিকেলে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার দুল্লা ইউনিয়নের মধুপুর বন ঘেষা কামারিয়া গ্রামে তার বন্ধু মৃত মোসলেম উদ্দিন ওরফে মুচুর পুত্র শফিকুল ইসলাম ওরফে শফি বাড়ীতে নিয়ে আসে।
সন্ধ্যার পূর্ব মুহুর্তে কামারিয়া গ্রামের ময়েজ উদ্দিনের পুত্র সানছু মিয়ার ভ্যাগ গাড়িতে করে করে মধুপুর বনের ইয়াদালীর চালা নামক জঙ্গলে নিয়ে অপহরণকারী চক্রের সদস্য আব্দুর রহিম, শফি, সানছুসহ, সেলিম, রিপন অজ্ঞাত কয়েকজন উপস্থিত হয়ে মোবাইল ফোনে তার ছেলের কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে বলে সূত্রে প্রকাশ। মুক্তিপণের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় এক পর্যায়ে সংঘবদ্ধ চক্রটির কয়েকজন পালাক্রমে ধর্ষণ করে ও এক পর্যায়ে হত্যার পরিকল্পনা করে। কিন্তু তাদের মধ্যে মধুপুরের গিলাগাছা গ্রামের সবুজের চেষ্টায় মহিলাটি প্রাণে বেঁচে যায়।
সকালে মহিলা মোবাইল ফোনে তার আত্মীয় স্বজনকে জানালে তারা তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পরদিন ধর্ষিতা মহিলা জামালপুর সদর থানায় মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থাল মুক্তাগাছা হওয়ায় তাকে মুক্তাগাছা থানায় পাঠায়। মুক্তাগাছা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ইয়াদালীর চালা টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর থানার অর্ন্তভুক্ত হওয়ায় মুক্তাগাছা থানা পুলিশ মধুপুর থানাকে অবহিত করে। পরে মধুপুর থানা পুলিশ ভিকটিমকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করে।
সূত্রমতে, ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল ও জামালপুর এই তিন জেলার সীমান্তবর্তী মধুপুর, মুক্তাগাছা ও জামালপুর সদর উপজেলার সীমন্তাবর্তী পাহাড়ী এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক, ডলার প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপকর্ম চলে আসছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিত্তশালী লোকদের কুড়িয়ে পাওয়া ডলার দেখিয়ে প্রলোভন দিয়ে এলাকায় এনে তাদের টাকা-পয়সা সহ সর্বস্ব লুট করে পিটিয়ে এবং হত্যার হুমকি দিয়ে এলাকা থেকে বিতারিত করে। এছাড়াও মাদক, নারী নিয়ে ফুর্তি করাসহ সকল অসামাজিক কাজ হয়ে থাকে।
জানাযায়, মুক্তাগাছার কামারিয়া, জামগড়া, চাঁনপুর, বিজয়পুর, রসুলপুর, মধুপুরের নয়াপাড়া, কাটাজানি, গিলাগাছা সহ এই অপরাধী চক্রের বিরাট নেটওয়ার্ক রয়েছে।
এলাকায় সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, ঘটনার নেপত্থে কামারিয়া গ্রামের মৃত সাইব আলীর পুত্র রিপন, কালুরঘাট এলাকার ছমির উদ্দিনের পুত্র সেলিম ডলার প্রতারণার সাথে সম্পৃক্ত ও উক্ত নারীর কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। ঘটনার আগের দিন শফি, রিপন, সেলিম ও সানছু তাদেরকে এক সাথে একাধিক জায়গায় কথা বলতে দেখা যায়। তাছাড়া ঘটনার রাতে ১২.১৫ টার দিকে শফি ও সানছুকে কামারিয়া বাজারে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিয়ে এক সঙ্গে যেতে দেখা যায় বলে এলাকার নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান।
এ ব্যাপারে মধুপুর থানা পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। আসামিদের ধরতে পারলেই পুলিশ প্রকৃত ঘটনা ও জড়িতদের সনাক্ত করতে পারবে।
0 coment rios: