মুক্তাগাছা | |
---|---|
উপজেলা | |
বাংলাদেশে মুক্তাগাছা উপজেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৪৫′৩৯″ উত্তর ৯০°১৬′৭″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ময়মনসিংহ বিভাগ |
জেলা | ময়মনসিংহ জেলা |
সরকার | |
• Mayor | Billal Hossain Sarkar |
আয়তন | |
• মোট | ৩১৪.৭০ বর্গকিমি (১২১.৫১ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০০৮)[১] | |
• মোট | ৪,০৬,০৮৫ |
• জনঘনত্ব | ১,৩০০/বর্গকিমি (৩,৩০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৫৫% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ২২১০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ৬১ ৬৫ |
মুক্তাগাছা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলা'র অন্তর্গত একটি উপজেলা। মুক্তাগাছা ময়মনসিংহ জেলার পশ্চিমে অবস্থিত। ময়মনসিংহ শহর থেকে মুক্তাগাছা উপজেলা সদরের দূরত্ব মাত্র ১৬ কিলোমিটার। মুক্তাগাছা মণ্ডার জন্য সুপ্রসিদ্ধ। মুক্তাগাছার এই মন্ডা শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবী খ্যাত। জমিদাররা ঊনবিংশ শতাব্দীতে ময়মনসিংহ শহরের উন্নয়নের জন্য বিশেষ অবদান রেখেছেন। তারা নানান সময় নানান প্রাসাদ তৈরী করেন যা আজও টিকে রয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থান[সম্পাদনা]
মুক্তাগাছা উপজেলার উত্তরে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা ও জামালপুর জেলার জামালপুর সদর উপজেলা, দক্ষিণে ফুলবাড়ীয়া উপজেলা, পূর্বে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা ও ফুলবাড়ীয়া উপজেলা, পশ্চিমে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলা ও জামালপুর জেলার জামালপুর সদর উপজেলা। প্রধান নদীঃ আয়মন, শিবখালী, সুতিয়া, ববিল, হাওদা, বাইহা, খালিয়া, দাবিয়া, চিতল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য বিল। মুক্তাগাছার মোট আয়তনঃ ৩১৪•৭১ বর্গ কিমি। বনভূমি ১২৫২ হেক্টর। মুক্তাগাছার অবস্থান 24.7583°N 90.2667°E । শুমারী অনুযায়ী এখানে ৬৪,০৪৪ টি ঘর আছে।
প্রতিষ্ঠাকাল[সম্পাদনা]
মুক্তাগাছা থানা সৃষ্টি হয় ১৯৬১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। পৌরসভা ১টি, ওয়ার্ড ৯টি, মহল্লা ২০ টি, ইউনিয়ন ১০টি, মৌজা ২৬১টি, গ্রাম ২৭৩টি। উপজেলা শহর ৯ টি ওয়ার্ড ও ২০ টি মহল্লা নিয়ে গঠিত। আয়তন ৭•২৮ কিমি। পৌরসভা সৃষ্টি ১৮৭৫ সালে। জনসংখ্যা ৩৭০৪৩ যার পুরুষ ৫০•৬৩ শতাংশ এবং মহিলা ৪৯•৩৭ শতাংশ। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে ৫০৮৮ জন।
প্রশাসনিক এলাকা[সম্পাদনা]
মুক্তাগাছা উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম মুক্তাগাছা থানার আওতাধীন।[২]
- ১নং দুল্লা
- ২নং বড়গ্রাম
- ৩নং তারাটি
- ৪নং কুমারগাতা
- ৫নং বাঁশাটি
- ৬নং মানকোন
- ৭নং ঘোগা
- ৮নং দাওগাঁও
- ৯নং কাশিমপুর
- ১০নং খেরুয়াজানী
ইতিহাস[সম্পাদনা]
জমিদার আচার্য্য চৌধুরীর বংশ মুক্তাগাছা শহরের গোড়াপত্তন করেন বলে জানা যায়। তারা শহরের গোড়াপত্তন করে এখানেই বসতি স্থাপন করেন। আচার্য্য চৌধুরী বংশের প্রথম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্য চৌধুরী ছিলেন বগুড়ার বাসিন্দা। তিনি মুর্শিদাবাদের দরবারে রাজস্ব বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তিনি ছিলেন নবাবের খুবই আস্থাভাজন। নবাবের দরবারে রাজস্ব বিভাগে কর্মরত থাকা অবস্থায় ১১৩২ সালে তিনি সেই সময়ের আলাপসিং পরগণার বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বর্তমানে মুক্তাগাছা শহরসহ মুক্তাগাছা উপজেলার বেশিরভাগই ছিল আলাপসিং পরগণার অন্তর্ভুক্ত। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নানা কারণে শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্য চৌধুরীর চার ছেলে রামরাম, হররাম, বিষ্ণুরাম ও শিবরাম বগুড়া থেকে আলাপসিং এসে বসবাসের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বসতি স্থাপনের আগে তারা এ পরগণার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন এবং বর্তমান মুক্তাগাছা এলাকায় বসতি স্থাপনের জন্য মনস্থির করেন। সে সময় আলাপসিং পরগণায় খুব একটা জনবসতি ছিলনা। চারদিকে ছিলো অরণ্য আর জলাভূমি। শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্যের চার ছেলে ব্রক্ষ্রপূত্র নদের শাখা নদী আয়মানের তীরবর্তী স্থানে নৌকা ভিড়িয়ে ছিলেন। তারা যে স্থানে নৌকা ভিড়িয়ে ছিলেন, সে স্থানটিকে এখনো পর্যন্ত রাজঘাট নামে ডাকা হয়। রাজঘাটে নৌকা ভিড়ানোর পরবর্তী সময়ে এলাকার অধিবাসীগণ সেই সময়ের প্রথা অনুযায়ী জমিদারদের সাথে সাক্ষাত করেন এবং নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী নজরানা দেন। সেই সময়ে উল্লিখিত স্থানটির নাম ছিল বিনোদবাড়ী। বিনোদবাড়ীর বাসিন্দাগণ ছিল প্রান্তিক চাষী ও জেলে। জমিদারদের যারা নজরানা দিয়ে ছিলেন, তাদের মধ্যে মুক্তারাম কর্মকার নামক এক ব্যক্তি তার নিজের হাতের একটি পিতলের গাছা বা দীপাধার জমিদারদের নজরানা দেন। জমিদারগণ মুক্তারামের মুক্তা এর সাথে গাছা শব্দটি যোগ করে বিনোদবাড়ীর পরিবর্তে জায়গার নামকরণ করেন মুক্তাগাছা। সেই থেকে মুক্তাগাছা নামকরণটি চলে আসছে।
জনসংখ্যার উপাত্ত[সম্পাদনা]
মোট জনসংখ্যা ৩,৬৬,৩৯৭ জন (২০০১ সনের আদমশুমারী অনুযায়ী), পুরুষ ১,৮৫,৯০৯ জন, মহিলা ১,৮০,৪৮৮ জন, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলো মিটারে ১,১৬৪ জন, বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩১%।
শিক্ষা[সম্পাদনা]
শিক্ষার হার ৪৫.৯৩ শতাংশ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ সরকারী কলেজ ২টি: শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজ, সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ। বেসরকারী কলেজ ৪টি: মুক্তাগাছা মহাবিদ্যালয়, হাজি কাশেম আলী মহিলা কলেজ, গাবতলী কলেজ ও বিনোদবাড়ি আইডিয়াল কলেজ। এছাড়াও রয়েছে উচ্চবিদ্যালয় ৪০টি, মাদ্রাসা ১৮টি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০১টি, বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৩টি। প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ রামকিশোর উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৩), নগেন্দ্র নারায়ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৭)।
অর্থনীতি[সম্পাদনা]
জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশাসমুহ কৃষি ৪৭•৭১%, কৃষি শ্রমিক ২২•৭৬%, অকৃষি শ্রমিক ২•৮২%, ব্যবসা ৮•৩%, চাকরি ৩•৫৯%, অন্যান্য ১৪•৮২%। প্রথম শ্রেণীর আবাদি জমির মূল্য ০•০১ হেক্টর প্রতি ২৫০০ টাকা। প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, পান, গম, আখ, সরিষা। বিলূপ্ত বা বিলুপ্ত প্রায় ফসলাদি স্থানীয় জাতের কলা, ডাল। প্রধান ফল আখ, কলা, জাম, তরমুজ, আম, কাঁঠাল, নারিকেল। মৎস্য, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১০৩টি, গবাদি পশু ২৭টি, হাঁস-মুরগি ৬১টি।
নদীসমূহ[সম্পাদনা]
মুক্তাগাছা উপজেলায় অনেকগুলো নদী আছে। সেগুলো হচ্ছে আয়মন নদী, সিরখালি নদী, সুতিয়া নদী, দেওর নদী, বানার নদী ও থাডোকুড়া নদী।[৩][৪]
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব[সম্পাদনা]
- জগৎকিশোর আচার্য চৌধুরী- (২৪ মার্চ, ১৮৬৪ - ২১ ডিসেম্বর, ১৯৩৮) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন জমিদার এবং শিক্ষার পৃষ্ঠপোষক।
- হেমেন্দ্রকিশোর আচার্য চৌধুরী- (২৮ মে, ১৮৮১ - জুন, ১৯৩৮) ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব।
- জীবেন্দ্র কিশোর আচার্য চৌধুরী- (১২ অক্টোবর, ১৯০৩ - ১ ডিসেম্বর, ১৯৯২) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন জমিদার এবং শিক্ষার পৃষ্ঠপোষক।।
- রমেন্দ্রকুমার আচার্য চৌধুরী- (১৯২২ — ৫ জুন ২০০৯), রবীন্দ্র পুরষ্কারপ্রাপ্ত কবি।
- এডভোকেট শামসুল হক, বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহের ( মুক্তাগাছা) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য (প্রায়াত)।
- কেরামত আলী তালুকদার, সাবেক সংসদ সদস্য।
- কে এম খালিদ- (জন্ম ৪ আগস্ট ১৯৫৫) বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী।
- এম হামিদ, বাংলাদেশী নাট্যকার ও নাট্যব্যক্তিত্ব।
- ফাল্গুনী হামিদ, একজন বাংলাদেশী অভিনেত্রী, নাট্যকার, পরিচালক ও প্রযোজক।
- তনিমা হামিদ, বাংলাদেশী মডেল, অভিনেত্রী এবং শিক্ষক।
- এ. কে. এম. মোশাররফ হোসেন- (আনু. ১৯৩৭–২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০) একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য।
- জিনাত মোশাররফ, জাতীয় পার্টির রাজনীতিবিদ এবং সাবেক সংসদ সদস্য।
- আবু রেজা ফজলুল হক বাবলু, বাংলদেশের ময়মনসিংহ জেলার রাজনীতিবিদ।
- হায়দার আলী:বীর বিক্রম খেতাব জয়ী।
ঐতিহাসিক নিদর্শন ও ঐতিহ্য[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে মুক্তাগাছা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৫।
- ↑ "ইউনিয়নসমূহ - মুক্তাগাছা উপজেলা"। muktagacha.mymensingh.gov.bd। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ২৬ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০২০।
- ↑ ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৪০০, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৯৪৫-১৭-৯।
- ↑ মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৬০৬। আইএসবিএন 984-70120-0436-4।
0 coment rios: