Monday, June 19, 2023

মফস্বল সাংবাদিক কালের স্বাক্ষী পত্রিকার পাতায়



সাংবাদিকতা একটি সেবামূলক পেশা। পেশা থেকে নেশাটাই মুখ্য। শহর থেকে গ্রাম, পথ থেকে মাঠ, উচু থেকে নিচু, আলো থেকে অন্ধকার। পেছনের দৃশ্যে বৃদ্ধ মায়ের কান্না। অবুঝ শিশুর বেঁচে থাকার আকুতিতে কত গল্প কত কাহিনী। বিষম চিন্তার কৌতুহলি মনের আদম্য আগ্রহ নিয়ে হাজারো লেখা ছাপা হয় পত্রিকার পাতায়। আজ জহুরুদ্দি কাল কহরুদ্দি স্বাক্ষী। তবে কালের স্বাক্ষী ফুরিয়ে যাওয়া কালির কলমের আবছা কালিতে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেখা মহুরুদ্দির সফলতার পাতা। কত টানাপুড়া শত অভাব অবুঝ শিশুর মিষ্টতার স্বাদ আনতে না পারা কাল ভুলীতে কত ধৈর্য্য কত মনোযোগ রহিমুদ্দির কষ্টের কথা প্রথম পাতায় আমার লেখা। কত নিপিড়নের বসার পিড়ি বাঁশ থেকে কাঠ আর কাঠ থেকে ইটের হলো। পাওনাদারের মুখের কথা লোহার থেকেও পাকা তবুও ছলিমুদ্দিনের দুর্দিনে ছুটে চলা। বউয়ের ছেঁড়া কাপড়। পকেটে ভাজ পড়া মায়ের প্রেসক্রিপসন। ছোট ভাইয়ের এ মাসের পড়ার খরচ। ছোট বোনটার চক চক করা রুপার নূপুর, মাস পার হতে না হতেই নয়। তা যে কত মাসের খেলা তা মাসকে প্রশ্ন করলেই সঠিক উত্তর পাওয়া যেতে পারে। নেই সরকারি-বেসরকারি চাকুরীর মতো মাস গেলেই বেতন। বছর গেলেই নেই ইনক্রিমেন্ট। নাই প্রমোশন বা পেনশন সুবিধা। তবুও থানায়, হাসপাতালে, ইউএনও অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ে কাটে সারাদিন।

প্রতিদিন নতুন নতুন বিষয় আছড়ে পরে একজন সাংবাদিকের সামনে। কলম চালানো পেশা নয়তো নেশা। এ নেশায় কখনো কখনো সুবিধা ভোগীর রক্ত চক্ষুর লাল চোখের চাহনিতেও পরিণত হয়। তবুও মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন জাগে জন্ম যার যেখানে সেটা তার জন্মস্থান। জন্ম স্থানকে ভালবাসা নিয়ে যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয়- জন্ম স্থানকে কতটুকু ভালবাসেন? উত্তর এমনও আসতে পারে আমার জন্মস্থান আমার মা, আমার মাটি, ভালবাসবো না মানে! প্রশ্নের মুখ থুবরে ফিরে আসতে হতে পারে। এখন প্রশ্ন রাখতে চাই- প্রতি ঘরের চল্লিশ ঘর প্রতিবেশী আর এ প্রতিবেশীর শিক্ষা মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) দিয়ে গেছেন। চল্লিশ ঘর তো দূরের কথা পাশের ঘরের খবরটাই অনেকে রাখে না। স্বার্থের খেলে আর অর্থের মোহে ডাকখোঁজে ভালবেসে থাকে। জীবন চলার গতি যদি স্বার্থ মিশ্রিত হয় তবে ভালবাসার স্থান কোথায়।

খেয়ে না খেয়ে গাড়ি না পেলে হেঁটে, পথে না পেলে মাঠেদৌড়ে তুলে ধরে ন্যায়ের সাথে পত্রিকার পাতায়। সাংবাদিকরা কারো পক্ষে লিখে না ন্যায়ের পক্ষে ন্যায়ের সাথে লিখে। সময়কে যদি প্রশ্ন করা হয় অমুক জায়গার অমুক দিনের রহিমুদ্দির কষ্টের দিনে কে তার কষ্টের কথা শুনেছে। মানুষ সফল না হলে কেউ তার কষ্টের কথা শুনে না। সফলতা ছাড়াই হাত সহযোগীতার হাতে আকড়ে ধরে একজন সাংবাদিক। শুনে নয় দেখিয়ে দিতে পারব ঐ কালের স্বাক্ষী পত্রিকার পাতা।

সততা মানুষকে দেয় শিক্ষানয় পরীক্ষা। প্রতিনিয়ত পরীক্ষা চললে জীবন হাঁপিয়ে উঠতে পারে। স্বস্থির নিঃস্বাস বলতে খাবারের থালা রেখে দৌড়ে চলা। সারাদিন কাজ করে বাড়ি ফেরার পথ থেকে আবার ফিরে আসা। মানসিক শান্তি ও প্রশান্তির জায়গাতে ক্রমিক নং বসিয়ে দিলে প্রথমেই রহিমুদ্দির কষ্ট বুঝি পত্রিকার পাতার উছিলায় গোচাল। গরীব রহিমুদ্দির মুখে যখন আনন্দের হাসি ফুটে ঠিক তখনই একজন সাংবাদিকের মন আনন্দে আর প্রফুল্লতায় ভরে উঠে। সে আনন্দে বাড়ি পৌছানো শূন্য হাড়িতে পান্তা মাখানো, বউয়ের চোখের অবাক চাহনী, আরচোখে খেয়াল না করা। এ যেন ক্লান্তিহীন কোন মানুষ। আজ রহিমুদ্দিনের কষ্টের দিন গোচাল, বউয়ের সাথে ভাগ করতেই মাঝে মাঝে অচেনা প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয় একজন সাংবাদিককে।

এই বুঝি ভোর হয়ে চলল এখনও ঘুমাউনি। প্রশ্নের জবাবে- চিন্তার মাথা, পায়ের ব্যথা বলে চালিয়ে নেয়া। সকাল এগারটায় সিনিয়রের ফোনের শাসনের ভাষাতে সাংবাদিকতা করবে কিভাবে তোমার দ্বারা সাংবাদিকতা হবে না। তাড়াতাড়ি আস চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। আবারও আমার লেখা পত্রিকার প্রথম পাতা। আজ আনন্দ রহিমুদ্দির নয়, আজ আনন্দ ভাগ করার নয় আজ আনন্দ শুধুই আমার। রাত শেষে দিন আসবে দিন শেষে রাত গড়িয়ে চলবে সময়ের ঘড়ি। মানুষ ভুলে যাবে রটনা গড়িয়ে আসবে ঘটনা তবে তুমি কালের স্বাক্ষী পত্রিকার পাতা।

জীবনের ভেলায় সময় গড়িয়ে চলে। না চাইলেও কেউ না ডাকলেও সময় ঠিকই ডাকাডাকি করে। কপাল কে কথার বাকে কাপাল বললেই বা কি যায় আসে। কেন আসলাম প্রশ্ন করতে করতে আবার কোন না কোন সংবাদ কিংবা ফিচার লিখে ফেলায় নতুন কোন দিনের সূচনা। তখন মুচকি মনের খুচকি হাসিতে বলেই ফেলা সাংবাদিতা তো আমার রক্তে মিশে গেছে এ যেন রুখবার নয়। নিজের কষ্টটা ব্রেইনে থাকে অপরের কষ্টটা থাকে মনে বিধায় বসে থাকতে পারে না একজন মফস্বল সাংবাদিক। লেখা প্রকাশ হয়েছে। আনন্দের মাতোয়ারায় প্রেসক্লাবের জ্ঞান চর্চার আলোচনায় প্রকাশিত সংবাদের আলোচনা সমালোচনায় আনতে পারলে বুক যেন প্রসারিত হয়ে যায়।

অধিকার আদায়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় কতটুকু সফল একজন মফস্বল সাংবাদিক তা আলোচনায় না আনলেই মনে হয় ভালো হতো। একজন সাংবাদিক সকলের পরিচিত, সম্মানের পাত্র না হয় স্নেহ ভাজন। আমার কাছে মনে হয় নিজের যতটুকু প্রতিভা আছে তা প্রকাশ করা সাংবাদিকতার একটি শাখা। অনেক সময় এ শাখা জীবনের প্রশাখাগুলোর দুয়ারে তালা লাগিয়ে দেয়। অসৎ কোন উদ্দেশ্যে সাংবাদিকতায় আসেনা কেউ। সৎ জীবনের সততার গল্পে অসহায় একজন সাংবাদিক। অমুক জায়গার দূর্নীতি কিংবা অপশক্তির বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করায় সাংবাদিক হামলার শিকার। মাঝে মধ্যে মানববন্ধন হয় পত্রিকায় লেখালেখি হয়। কিবা হয় তাতে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ধুমরে কেঁদে বিকলাঙ্গ হাত পা সুস্থতার চেষ্টায় দিন পার করা। যখন জীবনে কোন বিকলাঙ্গতার ছাপ ছিলনা তখনই শিশুর মুখের স্বাদ আনতে সময় সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়াতো আজ তো সেই অবুঝ শিশুর বোঝা হয়ে যাওয়া ছাড়া আর কি। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে একজন সাংবাদিক সংবাদ পরিবেশনে কিছু ভুল লিখে ফেলেছে তা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্পার্শ করে ফেলেছে তাই তার উপর মামলা হয়েছে গ্রেপ্তার জেল হাজতে আছে। প্রশ্নের প্রেক্ষিতে প্রশ্নে আনতে চাই একজন সাংবাদিক দূর্নীতি বা অপশক্তির অত্যাচারে সংবাদ পরিবেশন করায় হাজারো মানুষের উপকার হলো হাজারো মানুষের অজ্ঞতার চোখের দৃষ্টি উন্মোচন হয়ে যায় তা কোন ডিজিটাল আইন স্পর্শ করে তার পুরষ্কার হিসেবে একজন সাংবাদিক কি পুরষ্কার পায়। পুরষ্কারে এতটুকু যা প্রকাশে অনেচ্ছুক হলেও ভাঙ্গা হাত পা নিয়ে একজন স্ত্রীর জীবনের অকৃতজ্ঞ স্বামী। রাতে ঘরে ফেরা চিপস্ হাতে ঘুমিয়ে যাওয়া শিশুকে ঘুম থেকে ডাকা ‘বাবা উঠ দেখ তোমার বাবা তোমার জন্য কি এসেছে’। অবুঝ শিশুর বেভোর ঘুমের শিকল ছিড়ে বাবার কোলে উড়ে এসে জড়িয়ে ধরা আজ বুঝি কোন সে নেশার মাঠ ছাড়া খেলায় অসংখ্য গোলে বিজয়। 

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: