Sunday, June 18, 2023

৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর ঘুম হয় না পরিমিত


অনলাইন ডেস্ক:
  ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর প্রতিদিন পরিমিত ঘুম হয় না। এ ছাড়া ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশের মাথা ঝিম ঝিম ও ব্যথা অনুভূত হয়, ১৯ শতাংশের ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়, ২৪ শতাংশ চোখে ঝাপসা দেখে এবং ২৮ শতাংশ ক্লান্তি অনুভব করে।

দেশের ১ হাজার ৭৭৩ শিক্ষার্থীর ওপর চালানো এক জরিপে এমন তথ্য পেয়েছে বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন। শনিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সমীক্ষার এ তথ্য তুলে ধরা হয়। গবেষণায় বলা হয়, ইন্টারনেট তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য অনেকাংশেই নেতিবাচক ফলাফল বয়ে আনছে।

জরিপে বলা হয়, অপরিমিত ইন্টারনেট ব্যবহার করছে ৬২ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে দিনে ১১ ঘণ্টার বেশি অনলাইনে থাকে ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ৫-৭ ঘণ্টা ইন্টারনেটে থাকে ৩৭ শতাংশ ও ৩২ শতাংশ ব্যবহার করে ২-৪ ঘণ্টার মতো।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মাত্র ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনাবিষয়ক কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। অবসর সময় কাটাতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী যোগাযোগের প্রয়োজনে, ২৫ শতাংশ অনলাইন গেম খেলতে বা ভিডিও দেখতে, ১৩ শতাংশ অনলাইনে কেনাকাটা করতে এবং ৮ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে।

মানসিক সমস্যার পেছনে ইন্টারনেট ব্যবহারকে দায়ী করেছে ৮৬ শতাংশ তরুণ শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীর ৭২ শতাংশ বলেছে, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে তারা কখনো না কখনো মানসিক সমস্যায় পড়েছে। বিশেষ করে মানসিক সমস্যার জন্য পুরোপুরি ইন্টারনেটকে দায়ী করেছে ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। মাত্র ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছে, ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে তাদের কোনো মানসিক সমস্যা দেখা দেয়নি।

৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছে, ইন্টারনেটে সময় ব্যয় তাদের স্বাভাবিক জীবনে ‘প্রচণ্ড নেতিবাচক’ প্রভাব ফেলছে। এ ছাড়া ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনায় মনোযোগের বিঘ্নতার জন্য ইন্টারনেটে সময় ব্যয়কে দায়ী করেছে। ১৮ শতাংশ ইন্টারনেটে পর্নো দেখা, সাইবার ক্রাইম, বাজি ধরা, বুলিং করা প্রভৃতি অপ্রীতিকর কাজের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে পড়েছে। ২৩ শতাংশ ধীরে ধীরে অন্তর্মুখী হয়ে পড়েছে, ৩৬ শতাংশ ডিপ্রেশনসহ বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপ অনুভব করেছে এবং ২০ শতাংশ সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে।

৩ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী জানায়, ইন্টারনেটে সময় দিতে গিয়ে তারা ‘কখনোই’ পরিবারের সঙ্গে মন খুলে গল্প করতে পারে না। ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ‘খুব একটা’ পরিবারের সঙ্গে মন খুলে গল্প করে না। মাঝে মাঝে পরিবারের সঙ্গে আড্ডা দেয় ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।

পর্নোগ্রাফিতেও আসক্তির তথ্য উঠে এসেছে জরিপে। তাতে বলা হয়, ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি বা যৌন উত্তেজক বিষয় সম্পর্কিত ওয়েবসাইট দেখে। তাদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর মাথায় বিভিন্ন সময় এ বিষয়ক চিন্তা আসে, ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী সব সময় এ ধরনের কাজের প্রতি আগ্রহ অনুভব করে, ২৫ দশমিক ৫ শতাংশের মনে নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে, ১৫ শতাংশ বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে অসম্মানের দৃষ্টিতে দেখে ও ১০ দশমিক ৫ শতাংশ অনৈতিকভাবে যৌনতৃপ্তি উপভোগ করে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, জরিপে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আশঙ্কার চিত্র ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে ১৯-৩০ বছর বয়সী যে তরুণ যুবক গোষ্ঠী আছে তাদের হতাশা, বিষন্নতা এবং অন্যান্য সামাজিক-মানসিক অস্থিরতা আগের তুলনায় অনেক বেশি। এদের মধ্যে আত্মহত্যার হারও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট কিছুটা দায়ী বলেও প্রতীয়মান হচ্ছে।

জরিপের ফলাফল নিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট তানসেন রোজ বলেন, শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ ইন্টারনেটকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। কারণ আমাদের দেশে বিনোদনের ক্ষেত্রগুলো প্রায় সংকীর্ণ হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে ডিজিটাল লিটারেসি না থাকায় তারা ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: