অনলাইন ডেস্ক: কিশোর বিদ্রোহী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য মারা গিয়াছেন দেশ বিভাগেরও পূর্বে, ১৯৪৭ সালের ১৩ মে। সেই সময় কবি লিখিয়াছিলেন, ‘ভেজাল পোশাক, ভেজাল খাবার, ভেজাল লোকের ভাবনা, ভেজালেরই রাজত্ব এ পাটনা থেকে পাবনা।’ তাহার প্রয়াণের পর ৭৬ বছর পার হইয়া গিয়াছে; কিন্তু আজও এই উপমহাদেশ হইতে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ভেজাল দেওয়ার প্রবণতা কমে নাই। বরং অন্য কিছুর ন্যায় ইহারও প্রমোশন বা উন্নতি হইয়াছে বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। আমরা কত কিছুতে উন্নতি লাভ করিলাম; কিন্তু এই ভেজালের রাজত্ব দূর করিতে পারিলাম না। আফসোস, এমন আত্মঘাতী কাজ মানুষ কি করিতে পারে!
বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপদ কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামের বাকলিয়ার মিয়াখান নগরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করিয়া কয়েক জনকে পাকড়াও করিয়াছে। তবে এই অভিযান শুধু চট্টগ্রামেই নহে, সমগ্র দেশেই পরিচালনা করা প্রয়োজন। ঈদুল ফিতরের সময় আমরা যেমন সেমাইতে ভেজাল দেওয়ার খবর পাই, তেমনি ঈদে ভেজাল মসলার কারবারিদের দৌরাত্ম্য বাড়িয়া যায়। তাহাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ব্যবস্থা না লইলে তাহাদের এই অপতত্পরতা বন্ধ করা যাইবে না। আমরা জন্মের পর হইতেই খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার কথা শুনিয়া আসিতেছি। ইত্তেফাকের ‘আমরা কী খাচ্ছি‘ নামের সিরিজ রিপোর্টের পর জনগণের মধ্যে এই ব্যাপারে কিছুটা সচেতনতা আসিয়াছে; কিন্তু প্রশাসনিক পদক্ষেপ কাঙ্ক্ষিতভাবে বৃদ্ধি না পাওয়ায় ভেজালের অবসান হইতেছে না। এই ব্যাপারে এখন কদাচিৎ ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। অথচ এইরূপ পদক্ষেপ সমগ্র বছর ধরিয়াই অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। আবার সুকান্তের ভেজাল কবিতায় ফিরিয়া আসিতে হয়। তিনি আরও লিখিয়াছেন, ‘ভেজাল তেল আর ভেজাল চাল, ভেজাল ঘি আর ময়দা,/ ‘কৌন ছোড়ে গা ভেজাল ভেইয়া, ভেজালসে হ্যায় ফয়দা’। ভেজাল করিয়া ভেজালকারবারিরা যাহাতে ফায়দা লুটিতে না পারে, সর্বাগ্রে তাহারই ব্যবস্থা নিতে হইবে। নতুবা ‘ভেজাল নামটা খাঁটি কেবল আর সকলেই মিথ্যে’ হইয়া যাইবে। এই জন্য আমাদের সকলকে সচেতন ও দায়িত্বশীল হইতে হইবে। বাজারজাত মসলা নানা উপায়ে পরখ করিয়া ক্রয় ও ব্যবহার করিতে হইবে। সূত্র:
ইত্তেফাক
0 coment rios: