রিপন সারওয়ার: মুক্তাগাছায় গণশিক্ষায় শিক্ষিত লাল মিয়া শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে তার উদ্ভাবনী চিন্তায় যাত্রীবাহী রিক্সাকে বানিয়েছেন ‘লাইব্রেরী রিক্সা’। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত। লাল মিয়ার উদ্ভাবিত ভিন্ন মডেলের লাইব্রেরী রিক্সাটি জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ ও কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে।
উপজেলার কান্দিগাঁও এলাকার মৃত মমির আলীর পুত্র লাল মিয়া জীবিকা তাগিদে জীবনের প্রথম ভাগেই শুরু করেন বাঁশের নকশি সিলিং ও বাহারী ডিজাইনের বেড়া তৈরির কাজ। কিন্তু কালের বিবর্তনে বাঁশের নকশি সিলিং এর কাজ কমে যাওয়ায় জীবিকার তাগিদে শুরু করেন রিকশা চালানো। তবে দুই জনের বেশি যাত্রী ও মালামাল বহন করতে না পারায় উপার্জন কম হওয়ায় অধিক যাত্রী বহনের চিন্তা করতে করতে কেটে যায় দুই বছর। তারপর নিজ উদ্ভাবনী চিন্তায় সাধারণ অটো রিক্সাকে তৈরী করেছেন ভিন্ন মডেলের। সামনে ও পেছনে দুই দুই চার সিট ও ছাদের উপর চল্লিশ কেজি ওজনের মালামাল বহন করার ক্ষমতাসম্পন্ন যাত্রীবাহী ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সা। রিক্সাটির দুই পাশে করেছেন বই রাখার ব্যবস্থা। এছাড়াও গরমে যাত্রীদের আরামের কথা চিন্তা করে পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে রিক্সার ছাদে লাগিয়েছেন বাঁশের তৈরি কারুকার্যময় নকশি সিলিং এবং রাতের যাত্রীদের বই পড়ার জন্য রয়েছে আলোর ব্যবস্থা।
উপজেলা শহর ছাড়াও আশপাশের এলাকায় চলমান এ রিক্সাটি তার জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে চলমান যাত্রীদের মাঝে। এতে যাত্রী সহ জনসাধারণের মাঝে আগ্রহ ও কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে। কখনও দেখা যায় শহরের জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকা রিক্সার যাত্রীরা বই পড়ছেন রিক্সায় বসেই, আবার জ্যাম কমলেই যাত্রী নিয়ে আপন গতিতে চলতে শুরু করে বিষয়টি আগ্রহের সৃষ্টি করায় কাছে এগিয়ে যেতে দেখা গেল এটি কোন ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী নয় এটি একটি যাত্রীবাহী রিক্সা। রিকশাচালক তার উদ্ভাবনী চিন্তা থেকে যাত্রীবাহী রিকশাকে লাইব্রেরীতে পরিণত করেছে। ফলে যাত্রীরা গন্তব্যস্থলে পৌছানোর সাথে সাথে সময় পার করার জন্য পড়ছেন বই এতে প্রসারিত হচ্ছে জ্ঞানের পরিধি। অনেকেই বলছেন, লাল মিয়ার ভিন্ন ধরনের রিক্সায় যাত্রী পরিবহন ও সাথে বই রাখায় জ্ঞানের প্রসার সব মিলিয়ে নিজের রোজগার বৃদ্ধির এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি অভিনব এবং অনুকরণীয় প্রযুক্তি।
লাইব্রেরী রিক্সার চালক লাল মিয়া বলেন, বেশি যাত্রী বহন করার জন্য দুই ধাপে এ ব্যাটারী চালিত ভিন্ন মডেলের রিক্সাটি আমার মনমতো তৈরি করি। এলাকায় সাধারণ রিক্সার কোন অভাব নেই তাই একটু ব্যতিক্রমি চিন্তা করতে থাকি। তাছাড়া সাধারণ রিক্সায় দুই জনের বেশি যাত্রী বহন করা যায় না। অনেক সময় যাত্রী সংখ্যা তিন চার জন হলে গাড়িতে উঠতে চায়না আবার অনেকে বলে আরেকটা রিক্সা আসুক তারপর যাবো। তাই আমি আমার মতো করে রিক্সাটি তৈরি করেছি সাথে সাথে কিছু বইও রেখেছি যেন যাত্রীরা বই পড়তে পারে। আমার রিক্সা দেখলে এখন অনেকেই আগ্রহ করেই উঠতে চায়। ছাত্র-ছাত্রীরা আমার রিক্সায় উঠে অনেক আনন্দ পায়। আবার অনেক সময় বন্ধু-বান্ধবরা আনন্দের বসেও আমার রিক্সায় উঠে। এতে আমার আয় উপার্জন মুটামুটি ভালোই হচ্ছে। পরিবারের ভরনপোষণ ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ ভালোভাবেই চালাতে পারছি। এছাড়াও অনেকে মোবাইল করে গ্রামের বিয়ের যাত্রী বহন ও কোথাও বেড়াতে গেলে আমার গাড়ি ভাড়ায় নেন।
যাত্রী ইস্রাফিল আলম জানান, এ রিক্সায় চলাচলের সুবিধা হচ্ছে শহরে চলতে গিয়ে অনেক সময় জ্যামে বসে থাকতে হয়। অন্যান্য রিক্সায় সেই সময়টা খুবই বিরক্তি অনুভব করি। কিন্তু এ রিক্সায় সে বিরক্তিটা লাগে না কারণ বই পড়ে সময় পার করা যায়।
অনার্স পড়–য়া মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বন্ধুরা মিলে এ রিক্সায় চলাচলের মজাই আলাদা। একসাথে সবাই ঘুরতে যেতে পারি। তার পাশাপাশি ইচ্ছে হলেই বইগুলো নিয়ে পড়তে পারি। এতে বিনোদনের মাত্রা আরোও বেড়ে যায়। বইয়ের কিছু বিষয় নিয়েও বন্ধুদের মধ্যে আলোচনার একটি মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়।
একাধিক যাত্রীরা বলেন, রিক্সায় উঠে মুটামুটি ভালোই লাগছে। খোলামেলা আরামদায়ক বসার সীট তার উপর আবার বই পড়ার ব্যবস্থা। ভাড়াও বেশি নয় অন্যান্য সাধারণ রিক্সার মতোই।
0 coment rios: